শূন্য কেদারা
সাল ২০১৯ , internship জীবনে প্রবেশ ,বয়স কম , ভয় এক মাত্র সম্বল ,ভরসা ভগবান | কয়েক দিন কেটে গেলো এর ওর মুখের ভাব ভাজ পড়ে,কে রেগে !কে বিরক্ত !কে বা সহৃদয়ে কাছে টেনে নিচ্ছে | দিন যাচ্ছে ,কাজ শিখছি | হটাৎ চতুর্থ দিন লাঞ্চ খেয়ে department র দরজা খুলতেই ,সমস্বরে একটু দাদু দের মতন গলায় ডাক পারলো থার্ড মাইক্রোস্কোপের সামনে গান্ধীজির মতন চশমা পড়া একজন হাসি খুশি মানুষের ," দিদিমনি ,খাওয়া হলো ?" একটু সংকোচে পিছনে তাকিয়ে ঠাওর করলাম সিনিয়র দাদা কে ,কিন্তু বুঝে উঠতে পারলাম না ,চিনলো কি করে ! কিন্তু ভীষণ আনন্দ লাগলো কেউ তো এতো আপন ভাবে ডাকলো |
রোজই লাঞ্চ শেষে ডিপার্টমেন্টর দরজা খুললেই এক কথা "দিদিমনি ,খাওয়া হলো ?" কি যে ভালোবাসায় মাখা সেই কথা ,সারা দিনের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় | কিন্তু পরিচয় হয়ে উঠছে না |হটাৎ একদিন duty ছাড়ার আগে আবার সেই গলা "দিদিমনি ,কেমন লাগছে বল ?তোমার সাথে আলাপ করা হয়ে উঠছে না , শোনো ফাঁকা সময় আসবে আমি routine test গুলো দেখিয়ে দেব ,জানি সব যান ,তবু এখানে র নিয়মে দেখে নেবে ,কেমন ! " সেই আহ্বান ফেরাতে পারি নি , রোজ চেষ্টা করতাম ১৫ মিন হলেও আমি দাদা র কাছে শিখবো ,কত হাসি ,কোথায় আছি ,বাড়িতে কে কে আছে | কারুর মুখ ভার দাদা একদম দেখতে পারতেন না |
ছ মাস কেটে গেলো ,এবার আমার সময় শেষ , শেষ দিন দাদা র সাথে দেখা হলো না | একটা বিশেষ কাজে কদিন পর আবার যাওয়া۔۔ ۔۔۔۔ডিপার্টমেন্ট ঢুকতেই ,দিদিমনি খাওয়া হলো ? ভেসে এলো | সাড়া দিতে পারি নি ,চোখে জল এসে গেলো ,গলা ভারী ,সত্যি তো আর কেউ জিজ্ঞেস করবে না এই কথা ! ভীষণ একটা কষ্ট হলো |ঢুকে গিয়ে প্রণাম করে বললাম ,আপনি ভালো থাকবেন | পকেট থেকে একটা পেন বার করে হাতে দিলো ,বললো মনে হয়েছিল তুমি আসবে কেমন ,তাই আনছিলাম কদিন ধরে পেন সাথে |
বিদায় নিলাম , কিন্তু ভাবি নি ঐ শেষ বার ই যে শুনবো ,ঐ ডাক ۔۔۔۔
২০২১ , হটাৎ হোয়াটস্যাপে এ পরপর কয়েকজন র স্টেটাস এ দেখলাম সাদা চাদর এ মোরা চন্দন র টিপ্ এ সাজানো দাদা শেষ যাত্রার পথযাত্রী | ঠিক বিশ্বাস হলো না ,খবর নিলাম | করোনা কেড়ে নিলো আরও এক প্রাণ ۔۔۔۔
চোখের সামনে ভাসছে কেদারা ,আর দরজা র শব্দ আর ' দিদিমনি ,খাওয়া হলো ?"
©Srijita acharjer
Continue with Social Accounts
Facebook Googleor already have account Login Here