"গড়িয়াহাটের মুখে নিজের আইটেন গ্রান্ডে বসে ঘেমে প্রচন্ড বিরক্ত সম্রাট বাইরের দিকে তাকিয়েই থ হয়ে যায়। বৃষ্টি.. একঝলকে জীবনের অনেকগুলো পুরোনো পাতা খুলে গেল তার সামনে। খুব অভিমানী মেয়ে.. মেধাবীও.. একই কলেজে পড়লেও আলাপ হয়েছিল থার্ড ইয়ারে..... সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা.. বৃষ্টি খুব ভাল গান করত। প্রত্যেকবার গানের কম্পিটিশানে নাম দিয়ে প্রথম হত.. সেইবারেই শুধু সেকেন্ড হল.. আর সম্রাট ছিল সঞ্চালক.. নাম বলা হতেই বৃষ্টির চোখে নামলো বৃষ্টির ধারা.. ব্যাস একে সুন্দরী তায় ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী সম্রাট তো গলে জল। কাছে গিয়ে বললো.. "এমা! কি বোকা মেয়ে তুমি.. এইটুকু ব্যাপারে কেউ এমন করে বুঝি..??" নাক মুছতে মুছতে বৃষ্টি বলল "হুঁ, তুমি বুঝবেনা.." বললো বটে তবে তার এই নজরে বেশ খুশি হল.. আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নম্বর আদানপ্রদান হয়ে গেল এই জন্য যে পরের তারিখটা জানতে পারবে.. আস্তে আস্তে করে ভালো বন্ধু.. ক্রমে এমন জায়গা পাওয়া যেতোনা যেখানে দুজনকে একসাথে না দেখা যেতো.. পিছনের গাড়ির ড্রাইভারের চেঁচানিতে সম্বিত ফিরে পেল সম্রাট.. "কি দাদা ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি..??" সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে.. প্রায় সাত বছর পিছনে ফিরে গিয়ে কখন সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে খেয়ালই করেনি সে.. এদিকে বৃষ্টি কিন্তু এখনো ওপারের ফুটে একটা লোকের সাথে জিনিস নিয়ে দড়াদড়ি করছে.. মুহুর্তে কিছু ভেবে নেয় সে.. গাড়ি ঘুরিয়ে পাশের রাস্তায় ঢুকিয়ে দাঁড় করায় সোজা বৃষ্টির সামনে। হতবাক বৃষ্টি কিছুখন আগে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে.. বলার কিছু পায়না.. একটু সময় নিয়ে বলে.. "তুই তো সেই আগের মতোনই আছিস রে.. একটুও পাল্টাসনি.." "চল কোথাও বসি গিয়ে.. আড্ডা দেওয়া যাবে.. " একটু অস্বস্তি লাগলেও না করতে পারলোনা বৃষ্টি। দুজনে এসে বসলো একটা কফি শপে.. প্রথম দিকের চুপ করে থাকাটা পরে কেটে গেল বৃষ্টির। অনেক পুরোনো কথা হতে লাগলো পুরোনো বন্ধুদের কথা.. আবার কিছু এখনকার কথাও.. বৃষ্টি একটা কিডজী স্কুলে পড়ায় শুনে সম্রাট হেসে বলে.. "ভালোই তো, তুই তো খুবই বাচ্চা ভালোবাসতিস.. ঠিকই আছে।" অপরদিকে সম্রাট একটি আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থায় কাজ করে.. বৃষ্টি বলে.. "তুই তো বরাবরি খুব স্মার্ট... অফিসে অনেক ভক্ত আছে বল...." এরকমই সারাক্ষণ এ ওর পিছনে লেগে সময় কেটে যেতো মনে পরে ওর.. তুচ্ছ কারণে ঝগড়া করতো দুজনে সারাদিন.. আবার সেরকম এক তুচ্ছ কারণেই সম্পর্কটা কেটে গেল একদিন। হঠাৎ সম্রাট বৃষ্টির হাতটা ধরে.. "তুই ভাল আছিস তো.. সেই যে সেদিন রাগ করে চলে গেলি তারপর আর কোনো সাড়াই দিলিনা.. কত ফোন করেছি.. মেসেজ.. ইমেল.. বন্ধুদের দিয়ে খবর.. কোনো লাভ হয়নি।" হাতটা আলতো করে সরিয়ে নিলো সে.. "পড়েছে অনেক মনে পড়েছে.. কিন্তু খুব অভিমান হয়েছিল.. পরিস্থিতিও ছিল একদম প্রতিকূল.. করার কিছু ছিলোনা। " কিছুখন দুজনেই চুপ.. তারপর সম্রাট বলে.. " তোর বর তো শুনেছি কলেজের অধ্যাপক খুব রাশভারী মানুষ বুঝি..??'' "ঘুরিয়ে জানতে চাইছিস তো সত্যি ভাল আছি কিনা.. বল.. ", হেসে ওঠে বৃষ্টি.. একটু অপ্রস্তুত সম্রাট.. "যদি জানতে চাইই বা ভুল কিছু আছে কি?" "আসলে কি জানিস তো আমরা যা চাই সবসময় কি তাই হয়.. অনেকসময় অন্য কিছুর জন্য নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়.. " একটু হেসে বলে.. "সবটাই কি শুধু আমারই শুনবি নিজের সমন্ধে কিছু বলবিনা??" হাসে সম্রাট.. "আমার জীবনে তেমন কিছু একটা নতুন ঘটেনি রে তারপর.. শুধু কাজ আর কাজ.. এর মধ্যেই কিছু কিছু দিন কাটে অন্যরকম.. যেমন আজকের দিনটা.." গভীর চিন্তায় হারিয়ে যায় সে.. সহজ করতে বৃষ্টি বলে.. "খালি বকবকইই করবি তো আর এদিকে আমার পেট যে খিদেয় চুঁইচঁই করছে তার কি হবে?", বলেই হেসে ওঠে। ব্যাস দুজনে আবার হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে.. এরকম দিন আবার অনেকদিন আসবেনা মনে মনে ভাবে সম্রাট.. তাই বৃষ্টিকে তার বাড়ির সামনে ছাড়ার সময়ে হাতটা ধরে বলে.. "দারুণ কাটলো রে আজকের দিনটা.. তাই আমায় মনে রাখিস আর নাই রাখিস রাগ করে থাকিসনা বৃষ্টি.... এভাবেই ঝগড়া করিস.." হেসে হেসে হাত নেড়ে মিলিয়ে যায় বৃষ্টি.. ©Apu Mondal "
গড়িয়াহাটের মুখে নিজের আইটেন গ্রান্ডে বসে ঘেমে প্রচন্ড বিরক্ত সম্রাট বাইরের দিকে তাকিয়েই থ হয়ে যায়। বৃষ্টি.. একঝলকে জীবনের অনেকগুলো পুরোনো পাতা খুলে গেল তার সামনে। খুব অভিমানী মেয়ে.. মেধাবীও.. একই কলেজে পড়লেও আলাপ হয়েছিল থার্ড ইয়ারে..... সে এক অদ্ভুত অভিজ্ঞতা.. বৃষ্টি খুব ভাল গান করত। প্রত্যেকবার গানের কম্পিটিশানে নাম দিয়ে প্রথম হত.. সেইবারেই শুধু সেকেন্ড হল.. আর সম্রাট ছিল সঞ্চালক.. নাম বলা হতেই বৃষ্টির চোখে নামলো বৃষ্টির ধারা.. ব্যাস একে সুন্দরী তায় ক্লাসের মেধাবী ছাত্রী সম্রাট তো গলে জল। কাছে গিয়ে বললো.. "এমা! কি বোকা মেয়ে তুমি.. এইটুকু ব্যাপারে কেউ এমন করে বুঝি..??" নাক মুছতে মুছতে বৃষ্টি বলল "হুঁ, তুমি বুঝবেনা.." বললো বটে তবে তার এই নজরে বেশ খুশি হল.. আর কিছুক্ষণের মধ্যেই নম্বর আদানপ্রদান হয়ে গেল এই জন্য যে পরের তারিখটা জানতে পারবে.. আস্তে আস্তে করে ভালো বন্ধু.. ক্রমে এমন জায়গা পাওয়া যেতোনা যেখানে দুজনকে একসাথে না দেখা যেতো.. পিছনের গাড়ির ড্রাইভারের চেঁচানিতে সম্বিত ফিরে পেল সম্রাট.. "কি দাদা ঘুমিয়ে পড়লেন নাকি..??" সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে.. প্রায় সাত বছর পিছনে ফিরে গিয়ে কখন সিগনাল ছেড়ে দিয়েছে খেয়ালই করেনি সে.. এদিকে বৃষ্টি কিন্তু এখনো ওপারের ফুটে একটা লোকের সাথে জিনিস নিয়ে দড়াদড়ি করছে.. মুহুর্তে কিছু ভেবে নেয় সে.. গাড়ি ঘুরিয়ে পাশের রাস্তায় ঢুকিয়ে দাঁড় করায় সোজা বৃষ্টির সামনে। হতবাক বৃষ্টি কিছুখন আগে হাঁ করে তাকিয়ে থাকে.. বলার কিছু পায়না.. একটু সময় নিয়ে বলে.. "তুই তো সেই আগের মতোনই আছিস রে.. একটুও পাল্টাসনি.." "চল কোথাও বসি গিয়ে.. আড্ডা দেওয়া যাবে.. " একটু অস্বস্তি লাগলেও না করতে পারলোনা বৃষ্টি। দুজনে এসে বসলো একটা কফি শপে.. প্রথম দিকের চুপ করে থাকাটা পরে কেটে গেল বৃষ্টির। অনেক পুরোনো কথা হতে লাগলো পুরোনো বন্ধুদের কথা.. আবার কিছু এখনকার কথাও.. বৃষ্টি একটা কিডজী স্কুলে পড়ায় শুনে সম্রাট হেসে বলে.. "ভালোই তো, তুই তো খুবই বাচ্চা ভালোবাসতিস.. ঠিকই আছে।" অপরদিকে সম্রাট একটি আন্তর্জাতিক বিমানসংস্থায় কাজ করে.. বৃষ্টি বলে.. "তুই তো বরাবরি খুব স্মার্ট... অফিসে অনেক ভক্ত আছে বল...." এরকমই সারাক্ষণ এ ওর পিছনে লেগে সময় কেটে যেতো মনে পরে ওর.. তুচ্ছ কারণে ঝগড়া করতো দুজনে সারাদিন.. আবার সেরকম এক তুচ্ছ কারণেই সম্পর্কটা কেটে গেল একদিন। হঠাৎ সম্রাট বৃষ্টির হাতটা ধরে.. "তুই ভাল আছিস তো.. সেই যে সেদিন রাগ করে চলে গেলি তারপর আর কোনো সাড়াই দিলিনা.. কত ফোন করেছি.. মেসেজ.. ইমেল.. বন্ধুদের দিয়ে খবর.. কোনো লাভ হয়নি।" হাতটা আলতো করে সরিয়ে নিলো সে.. "পড়েছে অনেক মনে পড়েছে.. কিন্তু খুব অভিমান হয়েছিল.. পরিস্থিতিও ছিল একদম প্রতিকূল.. করার কিছু ছিলোনা। " কিছুখন দুজনেই চুপ.. তারপর সম্রাট বলে.. " তোর বর তো শুনেছি কলেজের অধ্যাপক খুব রাশভারী মানুষ বুঝি..??'' "ঘুরিয়ে জানতে চাইছিস তো সত্যি ভাল আছি কিনা.. বল.. ", হেসে ওঠে বৃষ্টি.. একটু অপ্রস্তুত সম্রাট.. "যদি জানতে চাইই বা ভুল কিছু আছে কি?" "আসলে কি জানিস তো আমরা যা চাই সবসময় কি তাই হয়.. অনেকসময় অন্য কিছুর জন্য নিজেকে তৈরি করে নিতে হয়.. " একটু হেসে বলে.. "সবটাই কি শুধু আমারই শুনবি নিজের সমন্ধে কিছু বলবিনা??" হাসে সম্রাট.. "আমার জীবনে তেমন কিছু একটা নতুন ঘটেনি রে তারপর.. শুধু কাজ আর কাজ.. এর মধ্যেই কিছু কিছু দিন কাটে অন্যরকম.. যেমন আজকের দিনটা.." গভীর চিন্তায় হারিয়ে যায় সে.. সহজ করতে বৃষ্টি বলে.. "খালি বকবকইই করবি তো আর এদিকে আমার পেট যে খিদেয় চুঁইচঁই করছে তার কি হবে?", বলেই হেসে ওঠে। ব্যাস দুজনে আবার হাসি ঠাট্টায় মেতে ওঠে.. এরকম দিন আবার অনেকদিন আসবেনা মনে মনে ভাবে সম্রাট.. তাই বৃষ্টিকে তার বাড়ির সামনে ছাড়ার সময়ে হাতটা ধরে বলে.. "দারুণ কাটলো রে আজকের দিনটা.. তাই আমায় মনে রাখিস আর নাই রাখিস রাগ করে থাকিসনা বৃষ্টি.... এভাবেই ঝগড়া করিস.." হেসে হেসে হাত নেড়ে মিলিয়ে যায় বৃষ্টি.. ©Apu Mondal
Will restore all stories present before deactivation.
It may take sometime to restore your stories.